History behind durga puja in Bengal
'এবার পুজোর সময় লর্ড লর্ড ক্লাইভ আমার বাড়িতে অনুগ্রহ পূর্বক প্রতিমা দর্শন করিতে আসিবেন। তাঁহার সহিত কোম্পানির বহু গণ্যমান্য ব্যক্তি উপস্থিত থাকবে তোমার আশা চাই'___
শোভাবাজার রাজবাড়ির রাজা নবকৃষ্ণ দেব তাঁর বন্ধুকে চিঠিতে একথা লিখছেন।
হ্যাঁ, ১৭৫৭ সালে রাজা নবকৃষ্ণ দেব বসন্তকালীন দুর্গাপুজোকে শরৎকালের তাঁর শোভাবাজার রাজবাড়িতে প্রথম শুরু করেন তবে এর পিছনে ছোট্ট ইতিহাসটা বলা দরকার।
১৭৫৭ সালের ২৩শে জুন পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলা পরাজিত হন। সেই পরাজয়ের অন্যতম উল্লসিত ব্যক্তিরা হলেন নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র ও কলকাতার রাজা নবকৃষ্ণ দেব। ক্লাইভের পরামর্শে তারা পলাশীর যুদ্ধের বিজয় উৎসব করেন দুর্গোৎসবের মধ্য দিয়ে। আর তাতে তাঁরা প্রচুর অর্থ খরচ করেন। এর পর থেকে প্রতিবছর শরৎকালে দুর্গা পূজা করে তারা পলাশীর যুদ্ধের স্মারক উৎসব পালন করতেন। আরও মজার ব্যাপার হলো তাদের দেখাদেখি অন্যান্য হিন্দু জমিদার বা ব্যবসায়ীরাও দুর্গোৎসব পালন করতে থাকেন।
অবাক করা কথা হলো ক্লাইভ নিজে খ্রিস্টান ও মূর্তি পূজার ঘোর বিরোধী হয়েও 1757 সালে নব নব নির্মিত ঠাকুরবাড়ির দুর্গাপূজায় ১০১ টাকা দক্ষিণা ফলমূল পাঠিয়েছিলেন। শুধু কি তাই সেবার বাড়িতে ক্লাইভ এর জন্য বাইজি নাচের আসর ও মদ মাংসের ব্যবস্থা করা হয়েছিল আর প্রথম শরৎকালের দুর্গার মূর্তি পূজা পরিণত হয়েছিল ক্লাইভের পুজায়। তবে প্রসঙ্গ ক্রমে বলে রাখা ভাল শরৎকালের দুর্গাপূজার ব্যাপারে পুরাণ ও রামায়নের পুজা ব্যতিরেকেই এই আলোচনা। দূর্গা পুজার পর পরবর্তীকালে কলকাতার বাবুদের দুর্গা পুজাতে সাহেবদের উত্তরত্তর ভিড় বেড়েছিল।
সেকালে পুজোর নিমন্ত্রণ এর ত্রুটি ঘটতো না,কার্ডের ব্যবস্থা ছিল। জানা গেছে বাবুদের সঙ্গে যাদের সাক্ষাৎ বা ব্যবসায় যোগাযোগ নেই তাদেরও পুজোতে আমন্ত্রণের জন্য বিজ্ঞাপন দেয়া হত।আসলে পুজোটা বাবুদের নামে হলেও দুর্গোৎসব ছিল আসলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাহেবদের পুজো। হলওয়েল সাহেবের লেখা Interesting Historical Event বই এ দূর্গাপূজা জেন্টুদের বা বাবুদের সবচেয়ে গ্রান্ড বা জমকালো উৎসব। সাধারণত সাহেবরাই এই উৎসবে যোগদান করার জন্য আমন্ত্রিত হতেন।
আবার কোম্পানির আরেক সাহেব দুর্গাপূজা করতেন নিজের টাকায়। অবাক করা কথা হলেও সত্য হান্টারের 'Anals of Rural Bengal' এর বিখ্যাত ম্যানুফ্যাকচারার জন চিপস সাহেব। বীরভূমের জনপ্রিয় 'শ্রীযুক্ত চিক বাহাদুর'। 1887 সালে তিনি কোম্পানির অডিটর জেনারেল হয়ে বীরভূমে যান। তিনি থাকতেন শান্তিনিকেতনের কাছাকাছি সুরুলে। আর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অফিস ছিল সোনামুখীতে। রায়পুরের লর্ড সিংহদের বংশের শ্যাম কিশোর সিংহ ছিলেন চিপসের দেওয়ান। কোম্পানির পাশাপাশি তিনি নিজেও ব্যবসা শুরু করলেন। কিন্তু ভালো মত হচ্ছিল না ঝোপ বুঝে শ্যামকিশোর তখন চিপস কে দুর্গা পুজো করার পরামর্শ দিলেন। তিনি প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেলেন। সুরুলে কোম্পানির দেওয়া সাহেবের কুঠিতে ধুমধাম করে পূজা শুরু হলো। চিপস সাহেবের পূজা বাবদ বছরে 50 টাকা পুজোর খরচ 17 টাকা বাকি টাকায় গাঁয়ের লোকে নতুন কাপড় দেওয়া হতো আর মহাষ্টমীর দিন পেট ভরে খাওয়া দেওয়া হতো।
[চলবে]
শোভাবাজার রাজবাড়ির রাজা নবকৃষ্ণ দেব তাঁর বন্ধুকে চিঠিতে একথা লিখছেন।
হ্যাঁ, ১৭৫৭ সালে রাজা নবকৃষ্ণ দেব বসন্তকালীন দুর্গাপুজোকে শরৎকালের তাঁর শোভাবাজার রাজবাড়িতে প্রথম শুরু করেন তবে এর পিছনে ছোট্ট ইতিহাসটা বলা দরকার।
১৭৫৭ সালের ২৩শে জুন পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলা পরাজিত হন। সেই পরাজয়ের অন্যতম উল্লসিত ব্যক্তিরা হলেন নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র ও কলকাতার রাজা নবকৃষ্ণ দেব। ক্লাইভের পরামর্শে তারা পলাশীর যুদ্ধের বিজয় উৎসব করেন দুর্গোৎসবের মধ্য দিয়ে। আর তাতে তাঁরা প্রচুর অর্থ খরচ করেন। এর পর থেকে প্রতিবছর শরৎকালে দুর্গা পূজা করে তারা পলাশীর যুদ্ধের স্মারক উৎসব পালন করতেন। আরও মজার ব্যাপার হলো তাদের দেখাদেখি অন্যান্য হিন্দু জমিদার বা ব্যবসায়ীরাও দুর্গোৎসব পালন করতে থাকেন।
অবাক করা কথা হলো ক্লাইভ নিজে খ্রিস্টান ও মূর্তি পূজার ঘোর বিরোধী হয়েও 1757 সালে নব নব নির্মিত ঠাকুরবাড়ির দুর্গাপূজায় ১০১ টাকা দক্ষিণা ফলমূল পাঠিয়েছিলেন। শুধু কি তাই সেবার বাড়িতে ক্লাইভ এর জন্য বাইজি নাচের আসর ও মদ মাংসের ব্যবস্থা করা হয়েছিল আর প্রথম শরৎকালের দুর্গার মূর্তি পূজা পরিণত হয়েছিল ক্লাইভের পুজায়। তবে প্রসঙ্গ ক্রমে বলে রাখা ভাল শরৎকালের দুর্গাপূজার ব্যাপারে পুরাণ ও রামায়নের পুজা ব্যতিরেকেই এই আলোচনা। দূর্গা পুজার পর পরবর্তীকালে কলকাতার বাবুদের দুর্গা পুজাতে সাহেবদের উত্তরত্তর ভিড় বেড়েছিল।
সেকালে পুজোর নিমন্ত্রণ এর ত্রুটি ঘটতো না,কার্ডের ব্যবস্থা ছিল। জানা গেছে বাবুদের সঙ্গে যাদের সাক্ষাৎ বা ব্যবসায় যোগাযোগ নেই তাদেরও পুজোতে আমন্ত্রণের জন্য বিজ্ঞাপন দেয়া হত।আসলে পুজোটা বাবুদের নামে হলেও দুর্গোৎসব ছিল আসলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাহেবদের পুজো। হলওয়েল সাহেবের লেখা Interesting Historical Event বই এ দূর্গাপূজা জেন্টুদের বা বাবুদের সবচেয়ে গ্রান্ড বা জমকালো উৎসব। সাধারণত সাহেবরাই এই উৎসবে যোগদান করার জন্য আমন্ত্রিত হতেন।
আবার কোম্পানির আরেক সাহেব দুর্গাপূজা করতেন নিজের টাকায়। অবাক করা কথা হলেও সত্য হান্টারের 'Anals of Rural Bengal' এর বিখ্যাত ম্যানুফ্যাকচারার জন চিপস সাহেব। বীরভূমের জনপ্রিয় 'শ্রীযুক্ত চিক বাহাদুর'। 1887 সালে তিনি কোম্পানির অডিটর জেনারেল হয়ে বীরভূমে যান। তিনি থাকতেন শান্তিনিকেতনের কাছাকাছি সুরুলে। আর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অফিস ছিল সোনামুখীতে। রায়পুরের লর্ড সিংহদের বংশের শ্যাম কিশোর সিংহ ছিলেন চিপসের দেওয়ান। কোম্পানির পাশাপাশি তিনি নিজেও ব্যবসা শুরু করলেন। কিন্তু ভালো মত হচ্ছিল না ঝোপ বুঝে শ্যামকিশোর তখন চিপস কে দুর্গা পুজো করার পরামর্শ দিলেন। তিনি প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেলেন। সুরুলে কোম্পানির দেওয়া সাহেবের কুঠিতে ধুমধাম করে পূজা শুরু হলো। চিপস সাহেবের পূজা বাবদ বছরে 50 টাকা পুজোর খরচ 17 টাকা বাকি টাকায় গাঁয়ের লোকে নতুন কাপড় দেওয়া হতো আর মহাষ্টমীর দিন পেট ভরে খাওয়া দেওয়া হতো।
[চলবে]
❤
ReplyDelete