কেন ইচ্ছেমতো আসন পাওয়া যায় না



indian railways seats
inside a sleeper class coach
বিমানে নিজের পছন্দমতো আসন বেছে নেওয়া যায়। এমনকী বাসের ক্ষেত্রেও সেটা সম্ভব। ব্যতিক্রম শুধু ট্রেন। কেন? যে রেল বারেবারে যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যের কথা বলে, সেই রেল যাত্রীদের পছন্দমতো আসন দেবে না, সেটা কি সম্ভব?
বাস্তবে কিন্তু অত্যন্ত হিসেব কষেই এই কাজটি করে রেল। এবং তার নেপথ্যে রয়েছে যাত্রী সুরক্ষার প্রশ্ন। স্রেফ ফিজিক্স-এর কতগুলি নিয়ম সামনে রেখে রেল কর্তৃপক্ষ হিসেবমতো আসন সংরক্ষণ করেন যাত্রীদের জন্য। কী সেই হিসেব? আসুন, দেখে নেওয়া যাক
প্রথমেই মনে রাখা প্রয়োজন, ট্রেন হল একটি গতিশীল বস্তু। ফলে, প্রতিটি ক্ষেত্রে ট্রেনের গতির বিষয়টি মাথায় রাখতেই হয়। রেলওয়ের বুকিং সফটওয়্যারটি তৈরি করা হয়েছে এই গতি এবং যাত্রীসুরক্ষার কথা মাথায় রেখে। ক্ষেত্রে মেনে চলা হয় একটিই বিষয়পুরো ট্রেনের উপরে ভার (বালোড’) ছড়িয়ে দেওয়া হবে সমানভাবে
ধরে নেওয়া যাক, একটি ট্রেনে ১০টি স্লিপার ক্লাস রয়েছে (এস১, এস , এস ...এস ১০) এবার এই ট্রেনের বুকিং যখন শুরু হবে, তখন সফ্টওয়্যার এস -এর (অর্থাৎ, একেবারে মাঝের কামরা) মাঝামাঝি আসন বরাদ্দ করবে। একটি কামরায় ৭২টি আসন থাকে। ক্ষেত্রে প্রথম টিকিটের জন্য বরাদ্দ হবে এস -এর ৩৫-৪০এর মধ্যে কোনও একটি আসন। এভাবেই ক্রমশ মাঝখান থেকে দুদিকে ছড়াতে শুরু করবে সংরক্ষণের সমীকরণ

প্রথমে সংরক্ষণ করা হয় লোয়ার বার্থ। তার পরে মিড্ এবং সর্বশেষে আপার। কেন এমন করা হয়। উত্তর সহজ। সর্বনিম্ন সেন্টার অফ গ্র্যাভিটি পেতেই এই হিসেব কষা হয়েছে। সফ্টওয়্যার এমনভাবে আসন সংরক্ষিত করে যাতে প্রতিটি কামরায় কমবেশি সমপরিমাণ লোড ( ক্ষেত্রে যাত্রী) থাকে। মূল উদ্দেশ্য হল, ‘লোডগোটা ট্রেনে সমানভাবে ছড়িয়ে দেওয়া। আগেই বলা হয়েছে, ক্ষেত্রে সফ্টওয়্যারের নিয়মই হল প্রথমে কামরার মাঝখানের লোয়ার বার্থ, তার পরে মিড্ এবং সবশেষে আপার বার্থ বরাদ্দ করা। ঠিক কারণেই শেষের দিকে টিকিট কাটলে ৭১, ৭২ নম্বর আসন পাওয়া যায়। জোটে আপার বার্থ
আসা যাক এর নেপথ্যে ফিজিক্সের যুক্তিতে। একটি ট্রেনে গড় গতি ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার। ট্রেনটি যখন ছুটছে, তখন তার উপরে একাধিস ফোর্স একসঙ্গে কাজ করে। ধরে নেওয়া যাক, প্রথম থেকে তিনটি স্লিপার কামরা ঠাসা, পরের তিনটি একেবারে খালি এবং শেষের তিনটি অর্ধেক বা তার থেকে কিঞ্চিৎ কম বা বেশি ভর্তি। এবার ১০০ কিমি বা তার বেশি গতিতে ট্রেনটি যখন বাঁক নেবে, তখন সেনট্রিফিউগ্যাল ফোর্স বা অপকেন্দ্র বল কয়েকটি কামরার উপরে সর্বোচ্চ এবং কয়েকটিতে সর্বনিম্ন। এতে অনিবার্যভাবে ট্রেন লাইনচ্যুত হবে
ছাড়া ব্রেক কষা হলে সবকটি কামরার উপরে এই ফোর্স সমানভাবে পড়বে না। কেননা, সবকটি কামরার ওজন সমান নয়। সে ক্ষেত্রেও লাইন থেকে ট্রেন ছিটকে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল
ঠিক এই কারণেই ইচ্ছেমতো ট্রেনে সংরক্ষিত আসন পাওয়া যায় না


2 comments:

Theme images by luoman. Powered by Blogger.