জোসেফ লিস্টার দ্বিতীয় পর্ব


জোসেফ লিস্টার দ্বিতীয় পর্ব

এসবের পিছনেও রয়েছে সেই জোসেফ লিস্টার লেস্টার শব্দটির সঙ্গে আপনাদের অনেকেই পরিচিত থাকার কথা। মুখগহ্বর পরিষ্কার করতে একটি তরল পদার্থ পাওয়া যায় যার নাম 'লিস্টার'  ।এখন প্রশ্ন হল এর নাম কেন লিস্টার এর নামানুসারে রাখা হয়েছে এই প্রশ্নের উত্তরেই লুকিয়ে আছে একজন সার্জেন এর বিজ্ঞানের কোন এক শাখার জনক হয়ে ওঠার গল্প ।১৮৬১ সালের এপ্রিল ইংল্যান্ডের আপটন নামক শহরে জন্ম নেয়া জোসেফ কর্মক্ষেত্র একদিন দেখতে পান যে, অপারেশন এর ক্ষেত্রে ৪০ থেকে ৫০ % রোগী কোনো এক অজানা কারণে মারা যায় ।লক্ষ্য করেন রোগীর শরীরে যে স্থানে কাটা হচ্ছে সেই স্থানটা তে বাজেভাবে পচন শুরু হচ্ছে। সে সময়ে অপারেশনের আগে একজন সার্জেন এর হাত ভালো ভাবে ধুয়ে নেওয়া কিংবা রোগীর ত্বককে জীবাণুমুক্ত করে নেওয়ার চল  শুরু হয়নি।

১৮৪০ সালে অ্যানেস্থেসিয়া আবিষ্কৃত হওয়ার পর অপারেশন করাটা সাধারণ একটা ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় অ্যানেস্থেসিয়া ব্যবহারে মানুষের শরীরে কোথাও কাটা হলে টের পাওয়া যায় না। কিন্তু তাও OT টেবিলে মৃত্যু থামেনি যে জায়গায় অপারেশন করা হচ্ছে সেখানে পচন শুরু হলে একটা সময় মানুষটিকে আর বাঁচানো সম্ভব হত না। এই সমস্যাটির সমাধান করেন লিস্টার । তার বাবা জোসেফ জ্যাকসন লিস্টার ছিলেন বড়  ওয়াইন ব্যবসায়ী। ওয়াইনকে অধিক সময় সংরক্ষণ করে পচে যাওয়া থেকে রোধ করতে লুইপাস্তুর এক পদ্ধতি আবিষ্কার করেছিলেন। বাবার ব্যবসার খাতিরেই লিস্টার লুই পাস্তুরের কাজগুলোর সান্নিধ্যে আসেন আর পরবর্তীতে এই জ্ঞানকে কাজে লাগার মানুষের অপারেশনে।

পাস্তুর দেখিয়েছিলেন যে, কোন তরল খাদ্য কিছু সময় পর নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এতে থাকা অণুজীব গুলোই মূলত দায়ী এজন্য। এর সমাধানও বাতলালেন পাস্তুর। নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় উক্ত তরলকে উত্তপ্ত করা হলে অণুজীবগুলো ক্ষতি করতে পারে না, উত্তপ্ত করা ছাড়াও ফিল্টারিং পদ্ধতির মাধ্যমে অণুজীব গুলোকে ছেঁকে রাখা এবং কোন রাসায়নিক পদার্থ প্রয়োগের মাধ্যমে অণুজীব গুলো কে মেরে ফেলে পচন রোধ করা যেতে পারে।লিস্টার বুঝলেন জীবন্ত মানুষের তাকে নিশ্চয়ই উচ্চ তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করা বা ফিল্টারিং করা কোনভাবেই সম্ভব নয় হাতে একটি উপায় বাকি থাকে এমন কোন রাসায়নিক পদার্থ খোঁজ নিতে হবে, যা দিয়ে ত্বকে উপস্থিত অণুজীব গুলোকে অক্ষম করা যেতে পারে এবং যেটি মানুষের দেহে বিষক্রিয়া তৈরি করে না।সে সময় তিনি জানতে পারেন ১৮৩৪ সালে ফ্রিদলিব ফার্ডিন্যান্ড রুঞ্জ আবিষ্কৃত 'ফেনল' নামে একটি রাসায়নিক পদার্থের ব্যাপারে। এই পদার্থের নাকি পচন প্রক্রিয়া রোধক তৎকালীন ব্যবহৃত ওষুধ এর মত গুণাবলী রয়েছে এ নিয়ে রীতিমত গবেষণা শুরু করেন বিস্তার পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখতে পান ফেনল নামে রাসায়নিক পদার্থটির যে অ্যান্টিসেপটিক গুণ রয়েছে, যা মানুষের ত্বকের পচন রোধেও ব্যবহার করা সম্ভব।তিনি তার অধীনে থাকা সার্জেন্ট দের জন্য বাধ্যতামূলক করে দেন যেকোনো অপারেশনের আগে ও পরে % ফেনল দিয়ে হাত ভালো মত ধুয়ে নিতে হবে। সেই সঙ্গে রোগীর যে অংশে অপারেশন করা হবে সেখানেও ফেনাল প্রয়োগে জীবানুনাশ করে নিতে হবে। দীর্ঘ চার বছর রোগীদের অপারেশন এর সময় লিস্টার ফেনল এর ব্যবহারের মাধ্যমে পচন ক্রিয়ায় মৃত্যু হার ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনেন। জোসেফকে অ্যান্টিসেপটিক ওষুধ ব্যবহার এর আবিষ্কারক হিসেবে সম্মানিত করা হয়

প্রথমদিকে লিস্টার এর এই পচনরোধক ব্যবস্থার পরিপন্থী ছিল সার্জেন্ট সমাজ।  ১৮৭৭ সালে কিংস কলেজের ক্লিনিক্যাল সার্জারিতে লিস্টারের ট্রান্সফার হলে , সেখানে গিয়ে প্রথম অপারেশনে স্ব-আবিষ্কৃত পচনরোধক ব্যবস্থার প্রয়োগ করে দেখালেন। সার্জেন সমাজে স্বীকৃতি পেল এই পদ্ধতি।

খুব কম আবিষ্কার কর্তা ই আছেন যারা জীবদ্দশায় নিজের আবিষ্কারকে পূর্ণরূপে ব্যবহৃত হতে দেখেছেন তাদের মধ্যে একজন হলেন এই জোসেফ লিস্টার। ১৮৯৩ সালে লিস্টার চিকিৎসা পেশা থেকে অবসর নেন ১৮৯৫ সাল থেকে ১৯০০ সালে তিনি ছিলেন লন্ডনের বিখ্যাত রয়েল সোসাইটির প্রেসিডেন্ট।

তার কাজগুলোকে স্মরণীয় করে রাখতেই তার মৃত্যু পরবর্তী সময়ে তার নামে গঠিত হয় একটি ট্রাস্ট ফান্ড। মেডিকেল জগতের প্রদত্ত খেতাব গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি খেতাব প্রদান করে থাকে এই ট্রাস্ট ফান্ড।  ১৯২৪ সাল থেকে শুরু হয় এই খেতাব প্রদান। প্রতি তিন বছর পর পর সার্জারীতে অসামান্য সাফল্য প্রদানে দেওয়া হয়ে থাকে এই লিস্টের মেডেল।

1 comment:

  1. লিষ্টার সম্বন্ধে আগে এতটা জানতাম না।
    এতটা জানানোর জন্যে ধন্যবাদ। 🙂

    ReplyDelete

Theme images by luoman. Powered by Blogger.